Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

উপজেলার পটভূমি

 

 

বাংলাদেশের সিলেট বিভাগের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হিসেবে জৈন্তাপুর বিশেষভাবে পরিচিত। প্রত্নতত্ব, নৃতাত্বিক এবং ভূতাত্বিক প্রেক্ষাপট বিশেষণ এবং প্রাচীন ঐতিহ্যের মিলনক্ষেত্র  হিসেবে  জৈন্তাপুর কে বর্ণনা করা যথোপযুক্ত । প্রাচীনকালে জৈন্তিয়া একটি স্বাধীন ও সমৃদ্ধশালী রাজ্য ছিল। জাইন্তিয়া শব্দ থেকে জৈন্তিয়া শব্দের উৎপত্তি। এ সম্পর্কে বিভিন্ন পন্ডিত নানা মত দিয়েছেন। প্রত্নতাত্বিক রাজমোহন নাথের মতে, যে জাইন্তিয়ার লোকেরা আদিতে টিন বংশের ছিলেন। চীন দেশ থেকে এসেছিল বলে তাদের সিটিং বলা হয়। সিন্টিং হতে জাইন্তিয়া শব্দ এসেছে। জাইন্তিয়া আদিবাসীগণ ঝুহঃবহমনামেও পরিচিত। ড.সুনীত কুমার চ্যাটার্জির মতে সিন্টেং শব্দ হতে জাইন্টেং শব্দটি উৎপত্তি লাভ করেছে। এবং সংস্কৃতকরণ বা আর্যকৃত হয়ে জৈন্তিয়া বা জাইন্তিয়া হয়েছে।

অনেকের মতেই জয়ন্তিয়া বা জাইন্তিয়া (খাসিয়া উচ্চারণ) শব্দটি সিন্টেং শব্দ হতে উৎপত্তি লাভ করেছে। টেং নামক আদি রাজমাতা হতেই জাইন্তিয়ার প্রাচীন রাজবংশের উৎপত্তি হয়েছিল। সম্ভবত জাইন্তিয়া শব্দটি খাসিয়াদের Youngteng(ইয়ংটেং) বা Youngtrai(ইয়ংট্রাই) শব্দ হতে এসেছে। খাসিয়া ভাষায় ইয়ং অর্থ ‘নিজ’ বা ‘আপন’ এবং টেং হলো কোন আদিমাতার নাম বিশেষ। Youngtengএর অর্থ হলো, ‘‘টেং- এর দেশ’’ ব আপন ভূমি। আদি জাইন্তিয়া ‘‘ইয়ান্তা’’ নামেই পরিচিত ছিল।

ইয়ান্ত শব্দটি (ইয়ংট্রাই) শব্দ হতে উৎপত্তি লাভ করতে পারে। ইয়াংট্রাই অর্থ স্বদেশ বা আদিভূমি বা নিজ ভূমি। মধ্যযুগ পর্যন্ত আ-খাসিয়াগণ জয়ন্তিয়াপুরের রাজধানী ‘জয়ন্তিয়াপুর কে’ ‘নিজ পাট’ বলে ডাকত। তাছাড়া সিন্টেং জাইন্তিয়ার আদিবাসী ‘‘পার ’’ নামে অভিহিত হতে বেশী স্বাচ্ছন্দ বোধ করে। পার কথাটির অর্থ হলো নিজ। অহংকার করে নিজেকে স্বদেশের উত্তরাধিকারী বোঝাতে পার শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। পার এর অর্থবোধক শব্দ হলো আদি অধিবাসী। তাই বলা যায় যে খাসিয়াদের নিজ দেশ বলতেই ইয়ান্তা বা জাইন্তিয়া বা জয়ন্তিয়া শব্দটি ব্যবহৃত করা হয়েছে। জাইন্তিয়ার আদিবাসীকে বোঝাতে পার- এর অ-আদিবাসীকে বুঝাতে ‘ডিখার’ বা রায়ত ব্যবহার করা হয়ে থাকে। প্রাচীনকালে এই জাইন্তিয়াপুরের রাজধানীকে ‘জাইন্তিয়া পার বলা হতো। জাইন্তিয়া পার হতেই জাইন্তিয়াপুর বা জয়ন্তিয়াপুর অতঃপর জৈন্তাপুর নামকরণ করা হয়েছে।

একসময়ে জৈমত্মাপুর উপজেলা তিনটি পরগনা ও দুইটি ইউনিয়নে বিভক্তি ছিল। ১৯৬০ সালে ১নং নিজপাট ও দরবস্ত ইউনিয়ন সময়ের বিবর্তনে জৈন্তাপুর থানাকে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরনের মাধ্যমে উপজেলা হিসাবে উন্নীত করা হয়। এদিকে ১৯৭০ সালের ১৬ই জুন জৈন্তাপুর থানা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন সিলেটের মাননীয় জেলা প্রশাসক জনাব আব্দুস সমাদ, সি এস পি। ১৯৮৩ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর তৎকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি মরহুম আব্দুস ছাত্তার জৈন্তাপুর থানাকে প্রশাসনিক উপজেলা হিসেবে উদ্বোধন করেন। ১৯৮৫ সালের ২৭শে এপ্রিল জৈন্তাপুর থানার নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আই.জি.পি) জনাব ই.এ চৌধুরী। ১৯৮৬ সালের ২৭শে মে নব-নির্মিত ভবন উদ্বোধন করেন অতিরিক্ত পুলিশ পরিদর্শক জনাব তৈয়ব উদ্দিন আহমদ। স্বাধীনতা উত্তর জৈন্তাপুর- গোয়াইনঘাট উপজেলা নিয়ে ২৩১-সিলেট-৪ সংসদীয় আসন করা হয়। ১৯৮৯ সালে গোয়াইনঘাট উপজেলার কিছু অংশ বর্তমান ফতেপুর, চিকনাগুল ইউনিয়ন জৈন্তাপুর উপজেলার সাথে সংযুক্ত করা হলে জৈন্তাপুর উপজেলার আয়তন বৃদ্ধি পায়। ১৯৯১ সালে ১নং নিজপাট ইউনিয়নকে ভেঙ্গে ৩নং চারিকাটা ও ২নং জৈন্তাপুর ইউনিয়ন করা হয় এবং ২০০২ সালে ৫নং ফতেপুর ইউনিয়ন ভেঙ্গে ৬নং চিকনাগুল ইউনিয়ন করা হলে বর্তমান জৈন্তাপুর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে পরিণত হয়। প্রথম উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আলহাজ্ব মোঃ সিরাজ উদ্দিন আহমদ।