Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

শিরোনাম
নাজিমগড় রিসোর্ট
স্থান

জৈন্তাপুর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে, লালাখালে অবস্থিত

কিভাবে যাওয়া যায়

জৈন্তাপুর থেকে নৌকা , স্পীড বোর্ড গাড়ি যোগে সরাসরি যাওয়া যাই।

যোগাযোগ

0

বিস্তারিত

          ভূমিকা : শ্রীভূমি সিলেট-বিশ্ববিখ্যাত মহান দরবেশ হযরত শাহজালাল (রঃ) ও হযরত শাহপরান (রঃ) সহ ৩৬০ আউলিয়ার স্মৃতি বিজড়িত দেশের প্রামিত্মক জনপদ জৈন্তাপুর। এ অঞ্চলে প্রকৃতি অকৃপন হাত বিলিয়ে দিয়েছে অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্য। প্রকৃতির রত্ন ভান্ডার হিসাবে খ্যাত সিলেট অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অফুরমত্ম সম্পদ আর সম্ভাবনা। এর মধ্যে ভারত সীমামত্মঘেষা জৈন্তাপুর উপজেলার লালাখাল ও শ্রীপুর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অপূর্ব লীলাভূমি। শ্রীপুর, জৈন্তাপুর ও লালাখাল রিসোর্টে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে প্রতিনিয়ত। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল হতে হাজার হাজার পর্যটক তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে এখানে বেড়াতে আসেন।

 

বিসত্মীর্ণ সবুজ পাহাড়ী মৌনতা আর মেঘালয় দুহিতা পিয়াইন, সুরমা লুভা ও সারী নদীর সম্মিলিত মূর্ছনায় স্বপ্নীল নিসর্গ জৈন্তিয়া। প্রকৃতির অনাবিল রূপ শোভিত জৈন্তিয়ার ছায়াময় পটভূমিকায় প্রতিদিন প্রত্যূষে হেসে ওঠে ঝলমলে রোদেও শিশুরা আর গোধূলীর রক্তিম নীলিমায় মনের কোনে ভিড় জমায় নতুন দিনের স্বপ্ন। শতবর্ষের ঐতিহ্য বুকে ধারন কওে আজও দাড়িয়ে আছে ঐতিহাসিক জৈন্তিয়ার রাজবাড়ি। পাহাড়ী সুন্দরী জাফলং, শীতল লালাখাল আর বর্ণিল শ্রীপুরের নকশী কাথাঁর জৈন্তিয়া যেন এক নিপুন বুনন, মানচিত্রের বুকে তিলোত্তমা।  গুরুত্বপূর্ণ

 

       মেঘালয় খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত তৎকালীন বৃটিশ শাসিত ভারত উপ-মহাদেশের শেষ স্বাধীন রাজ্য। পান, পানি, নারী-এই তিনের ঐতিহ্যেও ধারক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লীলাভুমি। বরাক, সারী, পিয়াইন, লাইন, কাপনা আর গোয়াইন নদীর অববাহিকার প্রাচীন প্রমীলা রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী সোনার জৈন্তিয়া। অপার সম্ভবনাময় এ অঞ্চলে রয়েছে খনিজ সম্পদে ভরপুর, প্রাচীন পুরার্কীতি আর তৈল, গ্যাস, বালু, পাথর, চা ও তেজপাতা এবং জলমহাল। এ ছাড়া মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃষ্টান আর আদিবাসী সম্প্রদায়ের বৈচিত্রময় জীবন। খাসিয়া সম্প্রদায়ের পান-সুপারীর বাগান কৃষি, খনিজ ও বনজ সম্পদের অাঁধার এই অঞ্চলে। ভূ-তাত্ত্বিক ও প্রাকৃতিক বিবেচনা থেকে জৈন্তিয়া কে নিয়ে গর্ব করার মতো রয়েছে অনেক কিছুই।

 

জৈন্তাপুর গুরুত্বপূর্ণ ভৌগলিক অবস্থান, নয়নাভিরাম নৈসর্গিক সৌন্দর্য নানা সম্পদরাজি আর এখানে বসবাসকারী খাসিয়া উপজাতি সম্প্রদায়ের বর্ণাঢ্য ও ব্যতিক্রমী জীবন যাত্রা জৈন্তিয়ার আকর্ষণকে অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে। অনেকের কাছে সারী নদীর নীল জল আর নদীর ওপারে লালাখাল চা-বাগান। চা বাগানের উচু-নিচু পথে চলতে চলতে এক সময়ে মনও কল্পনার রাজ্যে হারিয়ে যায়।

বর্ষাকালে নদীর দু কুল আছড়ে পড়ে ঢেউ। শীত মৌসুমে নদীর পানি থাকে খুবই কম। তখন এখানে জেগে ওঠা ছোট ছোট বালুচর পর্যটকদের নজর কাড়ে। এখানকার নদীতে বারকী নৌকা, পাথর আর বালুর সাথে জড়িয়ে রয়েছে হাজার হাজার মানুষের জীবন ও জীবিকা। সারা পৃথিবীর মানুষ আজ পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়নের ব্যাপারে অত্যমত্ম সজাগ এবং যত্নবান। বাংলাদেশ সরকারও বিষয়টির প্রতি বিশেষ গুরম্নত্ব আরোপ করেছে। তাছাড়া দেশের বনভূমি সম্প্রসারণ, বনজ সম্পদের উন্নয়ন, পরিবেশের উন্নয়নে নানামূখী কার্যক্রম বাসত্মবায়ন করে যাচ্ছে।

 

বর্ননা :  সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার দক্ষিণ পূর্বদিকে অবস্থিত দেশের সবচেয়ে পুরাতন চা-বাগান লালাখাল। এখানে প্রতিদিন দেশী-বিদেশী পর্যটকদের পদচারনায় মূখরিত থাকে। বৃটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত লালাখাল চা-বাগান ভারত বাংলাদেশের সীমামত্ম ঘেঁষা এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় পর্যটকদের আগমন ঘটছে। সম্প্রতি সময়ে নাজিমগড় রির্সোট সেন্টার দেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন বিকাশে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। যার ফলে দেশের ভ্রমণ প্রিয় মানুষ এখন লালাখাল ও জৈন্তাপুর  মূখী হয়ে পড়ছেন। এখানে রয়েছে ছোট বড় অনেক উচু নিচু টিলা আর চা-বাগান। চা-বাগানের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে সারী নদী। এই সারী নদীর নীল জল দেশী-বিদেশী ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের আলাদা আকর্ষণ অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে। শুক্রবার ও শনিবার অনেকই তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটে আসেন লালাখাল এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দেখতে। এখানে আগত অনেক পর্যটক মনে করেন চা-বাগান বেষ্টিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি রূপময় লালাখাল হতে পারে বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম একটি পর্যটন এলাকা।

 

         যেভাবে যাবেনঃ  সিলেট শহরের সোবহনীঘাট পয়েন্ট অথবা ওসমানী শিশু পার্ক ও দক্ষিণ সুরমা কেন্দ্রীয় বাস-টার্মিনাল থেকে সিলেট তামাবিল জাফলংয়ের বাস এবং লেগুনা গাড়িতে এসে সারীঘাট নামতে হবে। গাড়ি ভাড়া বাবদ ৪০ টাকা লাগবে।  লালাখাল চা-বাগান পর্যমত্ম যেতে দুটি রাসত্মা ব্যবহার করতে পারেন। সিলেট তামাবিল সড়ক হয়ে সারীঘাটে নেমে সারী নদী দিয়ে নৌকা অথবা ফেরীঘাট হয়ে সড়ক পথে যাওয়া যাবে। সারী নদী দিয়ে বেশীর ভাগ পর্যটক নাজিমগড় রির্সোট-এর স্পীডবোট নিয়ে যান। আবার অনেকই নৌকা দিয়ে লালাখাল ভ্রমনে যান। নৌকায় ৫শ থেকে ৬শত টাকা আর স্পীডবোট দিয়ে ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা ভাড়া লাগে। সারীঘাট উত্তর পার ডৌডিক রাসত্মা দিয়ে ছোট ছোট ব্যাটারী চালিত গাড়ি চলাচল করে। সারীঘাট থেকে লালাখাল ৫ কিলোমিটার দূরত্ব ভাড়া ১৫ টাকা। নদী পথে লালখাল ভ্রমন করার সময় সারী নদীর নীল জল ও নদীর দু-পাশে গোধুলী লগ্নে গ্রাম্য মেয়েরা কলসী দিয়ে পানি নেওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ার মত। দিনের বেলায় শত শত নৌকা শ্রমিকদের বালু উত্তোলন আর নদীর আকাঁ বাকাঁ পথ যে কোন বয়সের পর্যটকদের মন কাড়বে। বাগান এলাকায় সাওতাল নারী-পুরম্নষ চা শ্রমিকরা আপন মনে চা পাতা তোলার দৃশ্য দুর-দুরামত্ম থেকে আগত পর্যটকদের আর্কষণ অনেকটা  বাড়িয়ে দেয়।

 

পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশে সুপারিশমালাঃ

 

সরকারী অথবা বে-সরকারী উদ্যোগে লালাখাল পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশে নিমণরম্নপ কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহন করা যেতে পারে।

 

  • জৈন্তাপুর উপজেলার প্রবেশ মূখে (বটেশ্বর) জৈন্তিয়া গেইট সংস্কার করা।
  • সারী নদী থেকে অপরিকল্পিত ভাবে নৌকা দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করা, সারীঘাট দক্ষিণ পার নদীর পশ্চিম অংশে ক্যানেল নিমার্ন ও কয়েক ধাপ সিঁড়ি স্থাপন করা, নদীর পূর্বাংশে বালু চরে শীত মৌসুমে পর্যটকদের বসার জন্য ছাতা স্থাপন, সরকারী ব্যবস্থাপনায় সারী নদীতে চলাচলের জন্য অমত্মত ৫টি প্রমোদ তরী নৌকা  সংগ্রহ  করা, সারী ব্রিজ সংলগ্ন সরকারী জায়গার পূর্বাংশে সিলেট তামাবিল সড়কের পাশে কয়েক ধাপ সিঁড়ি স্থাপন।
  • নাজিমগড় রির্সোট-এর  বোর্ড ষ্টেশন পর্যমত্ম জায়গা জুড়ে নদীর নীচ থেকে উপর পর্যমত্ম মাটি ভরাট করে ক্যানেল নির্মাণ করা। সারী নদীর উজান অংশে লালাখাল বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন হতে অমত্মতঃ তিন কিলোমিটার নদীর বালু ও পাথর উত্তোলন স্থায়ীভাবে বন্ধ করে পর্যটকদের চলাচলের জন্য উন্মুক্ত রাখা।
  • ভারত-বাংলাদেশ সীমামত্ম এলাকায় সরকারী পাহাড় শ্রেণীর অনেক জায়গা রয়েছে। এসব জায়গার উপর আধুনিক ও উন্নত মানের একটি রিসোর্ট ও খাবার হোটেল তৈরী করা। সারীঘাট উত্তরপাড় লালাখাল রাসত্মার প্রবেশ মূখে একটি গেইট স্থাপন ও রাসত্মা সংস্কার করা, সম্ভব হলে সড়কের উভয় পার্শ্বে আলোক বাতি স্থাপন। সিলেট তামাবিল হাইওয়ে রাসত্মার উপরে ঐতিহাসিক প্রামত্ম শালাঘর সংস্কার করে ফুলের বাগান স্থাপন করা। জৈমত্মার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ছবি দিয়ে পর্যটকদের আকর্ষণ বৃদ্ধি করতে স্থায়ীভাবে কিছু ফেস্টুন লাগানো। দিক-নির্দেশক সাইনবোর্ড স্থাপন করা। উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় একটি ভ্রমন বিষয়ক পুসিত্মকা প্রকাশ করা যেতে পারে। সারীঘাট দক্ষিণ-পাড় গোয়াইন রাসত্মার মূখ ও সারীঘাট উত্তর-পাড় সিলেট-তামাবিল সড়ক অংশে  ট্রাফিক পুলিশের ব্যবস্থা করা। সারী নৌকাঘাট থেকে সারী-ব্রীজ পর্যমত্ম নানা রং-এর ফেস্টুন লাগানো হলে পুরো এলাকা একটি পর্যটন সম্ভাবনাময় অঞ্চল হিসাবে পরিচিত হয়ে উঠবে। এসব কাজ সরকারী ব্যবস্থাপনায় বাসত্মবায়ন করা হলে পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশ এবং সরকারী রাজস্ব আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি এলাকার অনেক শিক্ষিত বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সরকারী প্রকৌশল বিভাগের সহযোগিতায় একটি প্রজেক্ট প্রোফাইল করা যেতে পারে।

 

স্থানীয় সচতেন মহল মনে করেন দেশের পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন বিকাশে সুষ্ঠু একটি নতুন নীতিমালা তৈরী করা প্রয়োজন। এতে করে সরকার প্রতি বছর দেশের পর্যটন শিল্প থেকে কোটি টাকা রাজস্ব আয় করবে। জৈন্তাপুর উপজেলায় পর্যটন শিল্প গড়ে তুলার মত অনেক সম্ভাবনাময় স্থান রয়েছে। সরকারী ব্যবস্থাপনায় এসব এলাকার প্রাচীন নির্দেশগুলোর পরিবেশ সুন্দর ও সংস্কার করলে জৈন্তাপুর উপজেলাকে বাংলাদেশের মধ্যে শ্রেষ্ঠ পর্যটন অঞ্চল হিসাবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।